১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কলকাতার ‘দি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট’-এর এক চতুর্থাংশ হিস্যা পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হলে সেটির দায়িত্ব প্রফেসর আবদুস সামাদ-কে দেওয়া হয়। তিনি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে অবশেষে নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামকে বেছে নেন। কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটের ভাগে পাওয়া টাইপ রাইটার, বই, ফাইল এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে তিনি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। চট্টগ্রামে এসে প্রফেসর সামাদ কোথায় এটি স্থাপন করা যায় তাই নিয়ে পড়লেন দোটানায়। কারণ, মনমতো কোনো জায়গা পাওয়া যাচ্ছিলো না। প্রফেসর আবদুস সামাদের পূর্ব পরিচিত ও তৎকালীন চট্টগ্রাম কলেজ-এর অধ্যক্ষ আবু হেনার সাথে এই বিষয়ে আলাপ করতে গেলে তিনি এটিকে তাঁর কলেজের একটি বিভাগ করার প্রস্তাব দেন। এটিকে শুধুমাত্র একটি বিভাগ না করে সম্পূর্ণ আলাদা একটি ইন্সটিটিউট করাই ছিল অধ্যক্ষ সামাদের উদ্দেশ্য। তাই এই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে প্রফেসর সামাদ এর বিকল্প খুঁজতে থাকেন। অবশেষে কোতোয়ালী থানাধীন বর্তমান জি.পি.ও. (জেনারেল পোস্ট অফিস) এর সামনে শুকতারা বিল্ডিং এর দুই তলার পুরোটাই অস্থায়ীভাবে ভাড়া নিয়ে শুরু হয় ‘চট্টগ্রাম কলেজ অব কমার্স’ তথা বর্তমান সরকারি কমার্স কলেজের যাত্রা।
সদ্য ভাগ হওয়া দেশের বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের নানাবিধ চাহিদা মেটাতে বিশেষ করে ব্যাংক, বীমা, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজসমূহ সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য বিশেষায়িত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে ফাইনাল ডে কোর্স (বর্তমান এইস.এস.সি.) ও বি.কম ক্লাস চালু হয় ১৯৪৭ এর সেপ্টেম্বর মাসে। প্রিন্সিপাল সামাদ ছাত্রদের_কে বাণিজ্য বিষয়ক শিক্ষা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন।
সরকারিকরণ
১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এটি নিজ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছিলো। পরবর্তীতে এটি সরকারি স্বীকৃতি পায় এবং ‘চট্টগ্রাম কলেজ অব কমার্স’ থেকে ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অব কমার্স, চিটাগাং’-এ রূপান্তরিত হয়।
অধ্যক্ষ সামাদের চেষ্টায় কলেজটি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করে এবং একটি বিশেষায়িত কলেজ রূপে চালু হয়।
জিপিও থেকে নাহার ভবনে স্থানান্তর
ছাত্র সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং শুকতারা বিল্ডিংয়ে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯৫৪ সালে স্ট্রান্ড রোডস্থ, বাংলাবাজারে অবস্থিত তৎকালীন চট্টগ্রামের সবচাইতে বড় অট্টালিকা নাহার বিল্ডিংয়ে কমার্স কলেজ স্থানান্তরিত হয়। সরকারি কমার্স কলেজ ১৯৫৪-১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এখানে চালু ছিল।
আগ্রাবাদে মূল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
১৯৫৭ সালের ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার এস. এম. হাসান, সিএসপি আগ্রাবাদে বর্তমান মূল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখানে, ১৯৫৭ সালের শেষ দিকে সরকারি কমার্স কলেজ নাহার বিল্ডিং অর্থাৎ বাংলাবাজার থেকে স্থায়ীভাবে এসে তার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করে।
অবস্থান
কলেজটি চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকার, মোগলটুলী, কমার্স কলেজ রোডে অবস্থিত। ৫.১৬ একর জায়গা নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যস্ততম আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার পূর্ব প্রান্তে মনোরম পরিবেশে অবস্তিত চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ ব্যবসায় শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের মাত্র দুটো সরকারি কমার্স কলেজের মধ্যে এটি সবচেয়ে প্রাচীন। ১৯৪৭ খৃষ্টাব্দে ভারত বিভাজনের পর এ কলেজের প্রতিষ্ঠা।
কমার্স কলেজ রোডে অবস্থিত সরকারি কমার্স কলেজের মূল প্রবেশদ্বার ।
কলেজের গুরুত্বপূর্ণ কোড
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কোড : 3025
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোড : 4306
ইআইআইএন : 104302
কলেজের বর্তমান অবকাঠামো
মূল ভবন / প্রশাসনিক ভবন (৩ তলা বিশিষ্ট)
হিসাববিজ্ঞান ভবন (৩ তলা বিশিষ্ট)
নতুন একাডেমিক ভবন (৫ তলা বিশিষ্ট)
শহীদ রফিক মিলনায়তন (অডিটোরিয়াম)
শহীদ আবদুল হামিদ ছাত্রাবাস (পরিত্যাক্ত)
সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রী নিবাস
অধ্যক্ষের বাসভবন
শহীদ মিনার
বঙ্গবন্ধু মঞ্চ